স্টাফ রিপোর্টার : আজ শুক্রবার ১৯ জুলাই সকাল সারে ১১ টায় নেত্রকোনা পুলিশ সুপার সম্মেলন কক্ষে প্রেস কনফারেন্স করেন পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী ,বিষয় ছিল সজিব হত্যা পদ্মা সেতুর গুজব, গত ১৮-০৭-২০১৯ খ্রি. নেত্রকোণা পৌরসভাধীন কাটলী এলাকার রইছ উদ্দিনের ছেলে সজিবকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী একই এলাকার
এখলাছ মিয়ার ছেলে রবিন, উক্ত হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে মিশিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে যা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ নেত্রকোণার পক্ষ হতে নেত্রকোণাবাসী তথা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে উক্ত ঘটনার প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরা হলো-
হত্যাকারী রবিন মিয়া নেত্রকোণা পৌরসভাধীন কাটলীস্থপিতা-মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে কায়কোবাদের নির্মানাধীন ভবনের ৩য় তলায় পূর্ব পার্শ্বে টয়লেটে শিশু সজিবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। শিশু সজিবের হত্যাকারী রবিন নেত্রকোনার, পৌরসভাধীন নিউটাউন অনন্ত পুকুরপাড়ে তারেক মিয়ার বাসার গেটের সামনে গেলে স্থানীয় লোকজন তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে ধরে ফেলে এবং গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে রবিন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধারপূর্বক ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে বেলা ১৫.২৫ ঘটিকার সময় নেত্রকোণা পৌরসভাধীন কাটলীর জনৈক পিতা-মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে কায়কোবাদের নির্মানাধীন ভবনের ৩য় তলায় পূর্ব পার্শ্বে টয়লেটে একটি মাথা বিহীন দেহ পাওয়া যায় যা শিশু সজিবের বলে তার পিতা-মাতা সনাক্ত করে। পুলিশ উভয় লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতপূর্বক ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
ধারণা করা হচ্ছে মনের পুরনো কোন জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই সজিবের সাথে নির্মম ও বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটেছে। শিশু সজিবের গলা কাটার বিষয়টি শুধুই একটি হত্যাকান্ড। এর সাথে ছেলে ধরা বা পদ্মা সেতু গুজবের কোন সম্পর্ক নেই। এদিকে ঘটনার পরপরই নেত্রকোণা জেলা পুলিশ এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সজিবের পিতা রইছ উদ্দিন নেত্রকোণা মডেল থানাধীন আমতলা ইউনিয়নের কুমারপুর সাকিনের বাসিন্দা। বর্তমানে নেত্রকোণা পৌরসভাধীন কাটলিস্থ ডাক্তার মোঃ জালাল উদ্দিন এর বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে। রবিন পেশায় রিক্সা চালক এবং মাদকাসক্ত। শিশু সজিবের পিতা রইছ উদ্দিনও পেশায় একজন রিক্সা চালক। শিশু সজিবের পিতা রইছ উদ্দিন এবং রবিন উভয়েই পূর্ব পরিচিত এবং একই এলাকার বাসিন্দা। ইহা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ঘটনাটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব অথবা পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা হতে পারে। এ সংক্রান্তে নেত্রকোণা মডেল থানায় ০২ টি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে। সজিব হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা নং-১৯, তারিখ-১৮-০৭-২০১৯ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি এবং গণপিটুনিতে রবিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা নং-২০, তারিখ-১৮-০৭-২০১৯ খ্রিঃ, ধারা-৩০২ দন্ডবিধি। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে।
অপরিচিতি হলেই সন্দেহ করে কাউকে মারপিট করা যাবে না। এ ধরণের ভুল সিদ্ধান্তে নিজেও অপরাধী হয়ে যেতে পারেন। এতে যে কাউকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। এলাকা, পাড়া বা মহল্লায় অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আগে তার সাথে কথা বলুন এবং তার পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হন। তারপর কোথাও কোন সমস্যা মনে হলে পুলিশকে সংবাদ দিন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা নিয়ে ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। রবিন ছিল ঐ শিশুরই প্রতিবেশী এবং এলাকার চিহ্নিত মাদকাসক্ত যুবক। যদি গণপিটুনি দিয়ে রবিনকে না মেরে ফেলা হত তবে প্রকৃত ঘটনা পুলিশের মাধ্যমে অথবা সরাসরি তার মুখ থেকে দেশবাসী দ্রুত সময়েই শুনতে পারত। আইন কারো হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তদন্তাধীন বিষয়ে মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালানো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপরাধ। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটিকে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে মিশিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে যা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য। ঘটনাটি পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই। পদ্মা সেতু ও ছেলে ধরা সংক্রান্ত গুজবে কান না দেয়ার জন্য নেত্রকোণাবাসী তথা দেশবাসীকে অনুরোধ করেন,এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলার প্রবীণ সাংবাদিক বৃন্দ।