মোঃ মোকাম্মিল হোসাইন : কলমাকান্দা, নেত্রকোনা।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় শুক্রবার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নেত্রকোণা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড ও কলমাকান্দা উপজেলা কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবস ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় নাজিরপুর স্মৃতিসৌধে এবং দুপুর ১২টায় লেংগুরায় সাত শহীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এ ছাড়া বাদ জুম্মা লেংগুরা জামে মসজিদে এবং একই সময়ে স্থানীয় মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে দুপুর ২ টায় লেংগুরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল প্যান্ডেলে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক ও ডিসি নেত্রকোনা মঈনউল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও কলমাকান্দা ইউএনও মো. জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায়
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মানু মজুমদার ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ শাহজাহান মিয়া, নেত্রকোণা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল খালেক, নেত্রকোণার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. নূরুল আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুলতান গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই এই দিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুরে (ভবানীপুর) পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। এ যুদ্ধে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদরা হলেন- নেত্রকোনার ডা. আব্দুল আজিজ, ফজলুল হক, জামালপুরের জামাল উদ্দিন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার নুরুজ্জামান, দীজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, ইয়ার মাহমুদ ও ভবতোষ চন্দ্র দাস। এই ৭ শহীদের মরদেহ উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী এলাকায় ১১৭২ নম্বর সীমান্ত পিলার সংলগ্ন নোম্যান্স ল্যান্ডে সমাহিত করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই সকালে দূর্গাপুরের বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দায় পাকহানাদার ক্যাম্পে রসদ যাবার খবর পান মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার নাজমুল হক তারা’র নেতৃত্বে টাইগার কোম্পানির ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে নাজিরপুর বাজারের সব কয়টি প্রবেশ পথে অ্যাম্বুস করেন।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর পাকহানাদার বাহিনী না আসায় তাদের অ্যাম্বুস প্রত্যাহার করে তারা নিজ ক্যাম্পের পথে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে নাজিরপুর কাচারির কাছে পাকহানাদার বাহিনী তাদের উপর অতর্কিতে গুলি বর্ষণ শুরু করে। বীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ওই সাত মুক্তিযোদ্ধা।
মহান ওই সাত আত্মত্যাগী শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এবারও বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সহ সর্ব স্তরের হাজার হাজার জনতা সকল আঙ্গিকের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।