স্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় অটোরিকশা চালক আঃ খালেক (৬৫)‘কে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই এর ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উন্মোচনপূর্বক ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছিনতাইকৃত অটোরিকশা উদ্ধার এবং হত্যার সাথে জড়িত ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, ব্যাটালিয়ন ময়মনসিংহ।
গতকাল (২৯ জুন ২০২৩) তারিখ সকালে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানাধীন কামারিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে সড়কের পার্শ্বে ডোবায় একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন লাশটি ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানাধীন মোঃ আঃ খালেক (৬৫) হিসেবে সনাক্ত করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে মোঃ সোহাগ কর্তৃক বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়। এরই পেক্ষিতে, র্যাব -১৪, ময়মনসিংহ উক্ত ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। উক্ত হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অধিনায়ক এর নির্দেশক্রমে সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি আভিযানিক দল গতকাল (২৯ জুন ২০২৩) তারিখ দিবাগত অর্থাৎ (৩০ জুন ২০২৩) তারিখ রাত ০১.০০ ঘটিকার সময় ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানাধীন সিরতা ইউনিয়নের জয় বাংলা বাজারের আলম খাঁ মোড় এলাকা হতে আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম রতন (২৪), পিতা- মোঃ আবুল কাশেম, সাং- কাকনীকোনা, বিসকা, থানা-তারাকান্দা, এবং আসামি ০২। মোঃ সুমন মিয়া (২৩), পিতা- মোঃ ইউসুব আলী, সাং-চর আনন্দিপুর, পোঃ চর খরিচা, থানা-কোতোয়ালী, উভয়ের জেলা-ময়মনসিংহদ্বয়কে গ্রেফতার করে এবং তাদের হেফাজত হতে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ময়মনসিংহ মহানগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের চায়না মোড় এলাকার মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে মোঃ আঃ খালেক (৬৫) ভাড়ায় অটো রিকশা চালাতেন। মৃত আঃ খালেক (৬৫) তারাকান্দা থানাধীন কামারিয়া ইউনিয়নের চর ফরিদপুর গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ীতে বসবাস করতেন।
আসামি শহিদুল ইসলাম রতন ভিকটিম আঃ খালেক এর পূর্ব পরিচিত হওয়ায় প্রায় সময় ভিকটিম আব্দুল খালেকের অটোরিকশায় বাড়ী যাতায়াত করতো। আসামি রতন এবং সুমন মিয়া ঋণগ্রস্থ হওয়ায় তারা অটোরিকশা ছিনতাই করে তাদের ঋণ পরিশোধ করার পরিকল্পনা করে এবং সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি রতন ঘটনার দিন গত (২৮ জুন ২০২৩) তারিখ বিকালে ভিকটিম আঃ খালেক এর অটোরিকশা রিজার্ভ ভাড়া করে কোতোয়ালী থানাধীন শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ এলাকা থেকে জয় বাংলা বাজারে যায় এবং আসামি রতন অপর আসামি সুমন মিয়াকে ফোন করে ডেকে নেয়।
পথিমধ্যে, আসামীদ্বয় ভিকটিম আঃ খালেককে হত্যা করে তার অটোরিকশাটি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু আসামী রতন ভিকটিমের পরিচিত হওয়ায় ছিনতাইয়ের পর ঘটনা প্রকাশ হতে পারে ভেবে হত্যা করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক জয় বাংলা বাজার থেকে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করার জন্য রশি কিনে নেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি রতন পথিমধ্যে কয়েক পুরিয়া গাঁজা ক্রয় করে এবং ভিকটিম আব্দুল খালেককে সেবন করতে প্রলুব্দ করলে ভিকটিম গাঁজা সেবন করলে সে নেশাগ্র্রস্থ হয় এবং কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে, আসামি রতন তাকে অটোরিকশার পিছনে বসায় এবং আসামি সুমন মিয়া অটোরিকশাটি চালিয়ে নিয়ে কামারিয়া গ্রামের ফাকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে আসামি রতন এবং সুমন মিয়া মিলে ভিকটিম আঃ খালেককে প্রথমে হাত দিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে কিন্তু কাজ না হওয়ায় তারা পূর্বে ক্রয়কৃত রশি দ্বারা গলায় পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আসামীদ্বয় ভিকটিমের গলায় উপর্যুপরি কয়েকবার কিল-ঘুষি মারে।
এরপর, সুযোগ বুঝে ভিকটিমকে রাস্তার পাশে ডোবায় ফেলে দিয়ে আসামিদ্বয় অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।